অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণা বন্ধে দ্রুত নীতিমালা চায় আটাব
৫০ কোটির ব্যাংক গ্যারান্টিতে শত শত কোটি টাকার টিকিট বেচতো ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’
দেশের পর্যটন ও এভিয়েশন শিল্পকে রক্ষায় প্রতারণার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া এবং অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি-ওটিএ পরিচালনায় দ্রুত গাইডলাইন বা বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ-আটাব।
রবিবার নিজ কার্যালয়ে সংগঠনটির সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদ সভায় এ দাবি জানানো হয়। সন্ধ্যায় আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ’র পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা অংশীদার এবং সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম গত ২ আগস্ট হঠাৎ করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে অফিসে তালা দিয়ে এবং ওয়েবসাইট অকার্যকর করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
ফ্লাইট এক্সপার্টের এই প্রতারণার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠকে বসে আটাব কার্যানির্বাহী পরিষদ। সভায় আটাবের গঠনতন্ত্র মোতাবেক ফ্লাইট এক্সপার্টকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও সদস্যপদ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেইসাথে যাত্রী হয়রানি ও ট্রাভেল এজেন্টদের আর্থিক ক্ষতি কমাতে ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ কর্তৃক ইস্যু করা টিকেটের রিফান্ড স্থগিত রাখার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক যেন ক্রেডিট/ডেভিড কার্ডে অতিরিক্ত মূল্যছাড়ের অফার দিয়ে মার্কেটে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি না করে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানানো হবে। অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দিয়ে টিকেট বিক্রয়ের প্রচার-প্রচারণা ও বিক্রয়কারী এজেন্সির কর্মকান্ড সরকারের দৃষ্টিতে আনারও সিদ্ধান্ত নেয় আটাব। এছাড়াও ভুক্তভোগী সকল সদস্যদের প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা পেতে আটাব সহায়তা করবে বলেও জানিয়েছেন আফসিয়া।
আটাব জানায়, আরেফ ও আফসিয়ার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) এর প্রতারণামূলক কর্মকান্ড ও এয়ার টিকেট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। সেইসাথে ট্রাভেল এজেন্সি সেক্টরে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) পরিচালনায় গাইডলাইন/বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি জানিয়ে আসছে।
গত ২৭ জুলাই, ২০২৩ ও ১০ জুলাই, ২০২৪ইং তারিখে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) এর প্রতারণামূলক কর্মকান্ড বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং লোভনীয় প্যাকেজ ও অধিক মূল্য ছাড়ের ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য আটাব ট্রাভেল এজেন্সি ও সাধারণ যাত্রীদের সকর্তীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে আটাব সদস্যদেরও সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এছাড়া গত বছরের ১৯ শে অক্টোবর অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আটাবের সংবাদ সম্মেলন করে। যা বিভিন্ন অনলাইন নিউজ ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওটিএ কর্তৃক পোর্টালের আইডি শেয়ার করে অল্প দামে অথবা অতিরিক্ত কমিশনে টিকিট বিক্রয়ের প্রলোভন দিয়ে বাজার দখল করে ফ্লাইট এক্সপার্ট। এরকম প্রতিষ্ঠান সাধারণত বিক্রয় ও ডিপোজিটের পরিমাণ বেশি হলে তখন তারা গ্রাহক ও এজেন্টদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। এর আগেও ‘হালট্রিপ’, ‘২৪টিকেট ডট কম’ এবং ‘লেটস ফ্লাই’ নামের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো একইভাবে যাত্রীসাধারণ ও অন্যান্য ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে উধাও হয়েছে। পোর্টাল আইডি শেয়ার ও অতিরিক্ত মূল্য ছাড় বন্ধ করা না হলে আগামীতে আরো অনেকগুলো ওটিএ বাজার থেকে উধাও হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা ফ্লাইট এক্সপার্ট ৭/৮ বছর যাবত অনলাইনে ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। অতিরিক্ত কমিশন বা ছাড়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় কয়েকটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির মতো তারাও জড়িয়ে পরে। প্রতি টিকিটে বাজার মূল্যের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বা ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি ছাড় দেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে বাজারে এয়ারলাইন্স টিকিটের দর নিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও গেম প্লে করে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইট এক্সপার্টের আইএটিএ (IATA) ব্যাংক গ্যারান্টি ছিল মোট ৫০ কোটি। কিন্তু তারা টিকিট বিক্রি করতো দুই থেকে চারশ’ কোটি টাকার। বিভিন্ন বড় এজেন্সি থেকে টিকেট সংগ্রহ করে পুণরায় বিক্রয় করতো। তবে, কী পরিমাণ টিকিট এভাবে বিক্রি করতো তার অর্থমূল্য নিশ্চিত হতে পারেনি আটাব।
অভিযোগ রয়েছে, ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সালমান বিন রশীদ শাহ সায়েম সরাসরি গ্রাহক এবং ছোট-মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক সহযোগি কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্টের অন্তত তিনশ’ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে। তবে, ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবসায়িক পোর্টফোলিও কত ছিল বা কত টাকা নিয়ে দেশ ছেড়েছেন সালমান সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
বিজভিউ/ জেডএইচএস