ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধে দিশেহারা অনেকে
‘রিফান্ড’ আতঙ্কে টিকিটের টাকা গচ্চার শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
অনলাইনে উড়োজাহাজের টিকিট বুকিংয়ে জনপ্রিয় দেশিয় প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ বন্ধ হয়েছে শনিবার। এ ঘটনায় চরম বিপাকে দেশের বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি টিকিট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এরকম অন্তত অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ কোটি টাকার বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে।
ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধের খবর রটার সঙ্গে সঙ্গে ঐদিন রাতের ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে আগাম কেটে রাখা ফ্লাইটের টিকিট রিফান্ড করা শুরু করে সোমা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বড় টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি। যারা এতদিন ফ্লাইট এক্সপার্টকে তাদের টিকিট বিক্রিতে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছিল। সোমা ইন্টারন্যাশনাল হুট করে টিকিট রিফান্ড শুরু করায় বেশকিছু ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান তাদের ইস্যু করা টিকিট নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে। টিকিটের দাম বাবদ ফ্লাইট এক্সপার্টকে পরিশোধ করা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তারা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘ সোমা ইন্টার ন্যাশনাল শনিবার রাতেই টিকিট রিফান্ড শুরু করেছে। রাতের অন্ধকারে অফিস বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ভিতরে বসে সব পিএনআর (যাত্রীদের নামের রেকর্ড) রিফান্ড করছে’। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ জানান ভুক্তভোগীরা।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মতো সেবা দিয়ে আসছিল ফ্লাইট এক্সপার্ট। বিশেষ করে কম খরচে সহজে টিকিট বুকিংয়ের সুবিধার কারণে প্ল্যাটফর্মটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু শনিবার প্ল্যাটফরমটি বন্ধ করে দেশ ছাড়েন ফ্লাইট এক্সপার্টের সিইও সালমান বিন রশীদ শাহ সায়েম। অভিযোগ উঠেছে, সরাসরি টিকিট ক্রেতা এবং ছোট-মাঝারি ট্রাভেল এজেন্টদের অন্তত তিনশ’ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি। খবরটি দু’দিন ধরেই ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছে ‘টক অব দ্য টাউন’। এ ঘটনায় গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কোটি কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
গ্রাহক ও এজেন্সির কয়েকশ’ কোটি টাকা নিয়ে ‘লাপাত্তা’ ফ্লাইট এক্সপার্ট
যদিও ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সালমান বিন রশিদ দাবি করেছেন, এই অভিযোগ সত্য নয়। গ্রাহকের টাকা নিয়ে দেশ ছাড়েননি তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা বিশ্বাসঘাতকতা করায় নিজেকে হুমকি ও অপবাদ থেকে রক্ষা করতেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়ে দেশ ছেড়েছেন। এ বিষয়টি শুক্রবার রাতেই তাদের নিজস্ব গ্রুপে শেয়ার করেছেন বলে জানান সালমান।
এদিকে, ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধের খবরে টিকিট বিক্রেতা ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্লাইট এক্সপার্টের মতিঝিলের কার্যালয়ে ভিড় করে। রবিবার সকাল থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইনসে কাটা অনেক টিকিট যাত্রীদের নামের রেকর্ডে (পিএনআর) দেখতে পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি। বিশেষ করে, সোমা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এজেন্সি ব্যাপক হারে টিকিট রিফান্ড শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীরা। ফ্লাইট এক্সপার্টের আরেক সহযোগী এজেন্সি হাজী এয়ার ট্রাভেলসও সোমবার থেকে টিকিট রিফান্ডের ঘোষণা দিয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
এদিকে রবিবার বিকেলে সোমা ইন্টারন্যাশনালের ঢাকা কার্যালয়ে যান ভুক্তোভোগী প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। সেখানে তাঁরা রিফান্ড হওয়া টিকিটের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
ফ্লাইট এক্সপার্টের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকা কোম্পনিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি নিজেদের আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) নম্বর ছাড়াও অন্য বেশ কয়েকটি কোম্পানির আইএটিএ নম্বর ব্যবহার করে টিকিট কাটত।
এর মধ্যে রয়েছে মক্কা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, সোমা ইন্টারন্যাশনাল, হাজী এয়ার ট্রাভেলস ও প্রোমা প্রমুখ। ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ওই কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ টিকিট রিফান্ড করে টাকা তুলে নেওয়া শুরু করে। এতে বিপাকে পড়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এজেন্সিগুলো, যারা গ্রাহককে টিকিটের নিশ্চয়তা দিয়ে তাদের থেকে টিকিটের দাম সংগ্রহ করেছে এবং তা ফ্লাইট এক্সপার্টকে পরিশোধ করেছে।
এদিকে, এজেন্সিগুলো যেন টিকিট রিফান্ড করতে না পারে, সে বিষয়ে সোমবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে একটি অনুরোধপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ। বিক্রিত টিকিটের মালিক যাত্রী। তাই কেউ রিফান্ড করে থাকলে যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। এজন্য ভুক্তভোগীদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত চেয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, এ ঘটনায় ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিককে কারণ দর্শানোরে নোটিশ দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে আটাব।
বিজভিউ/ জেডএইচএস